প্রাচীন সভ্যতা
Ancient Civilization
কোনো দেশ বা অঞ্চলে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর বহমান মন-মানসিকতা, চিন্তা-চেতনা, শিক্ষা-সংস্কৃতি, রীতি-নীতি জীবনবোধ, ভাবনা-বিলাস ও দৈনন্দিন জীবনযাত্রার বহিঃপ্রকাশ সভ্যতার মাধ্যমে ঘটে থাকে। পরিবর্তনীয় মানব ইতিহাসে ধাপে ধাপে যে কৃষ্টি দানা বেঁধে উঠেছে তা-ই সভ্যতা নামে পরিচিত। আরনল্ড টয়েনবির ধারণা, মানব ইতিহাসের বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন অঞ্চলে যে বিশেষ কৃষ্টির উদ্ভব ঘটেছিল সেটিই সভ্যতা। বস্তুত দীর্ঘকালের প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই আধুনিক সভ্যতার বিকাশ ঘটে।
মানবসভ্যতার ক্রমযাত্রা : নিঃসন্দেহে মানুষ সৃষ্টির সেরা। বুদ্ধিবৃত্তিক জীব হিসেবে টিকে থাকার জন্য তাদের প্রয়াস ও প্রচেষ্টার সমন্বিত ফল সভ্যতা। তাই মানব সৃষ্টির সূচনা পর্ব থেকেই মানব সভ্যতার বিকাশ শুরু হয়। ঐতিহাসিকরা মানব সভ্যতার বিকাশের ধারাকে প্রাগৈতিহাসিক যুগ ও ঐতিহাসিক যুগে ভাগ করেছেন।
প্রাগৈতিহাসিক যুগ : আজ থেকে লাখ লাখ বছর আগে পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাব হয়েছিল। তখন মানুষ বাস করত এক আদিম সমাজে। মানুযের উদ্ভব থেকে সভ্যতা গড়ে উঠার পূর্ব পর্যন্ত দীর্ঘ এ সময়কে প্রাগৈতিহাসিক যুগ বলা হয়। এ যুগে মানুষ পাথরের তৈরি হাতিয়ার ব্যবহার করত বলে এটি প্রস্তর যুগ নামেও পরিচিত। প্রাগৈতিহাসিক যুগে লিপির অস্তিত্ব ছিল না; ছিল না যন্ত্র কলাকৌশলের ব্যবহার। সে কারণে ফসিল বা জীবাশ্ম এবং ব্যবহৃত জিনিসপত্রের উপর নির্ভর করে আমরা তাদের সম্পর্কে জানতে পাই। হাতিয়ারের ধরন, জীবিকা, জীবনধারা ইত্যাদি বিবেচনা করে প্রাগৈতিহাসিক যুগের মানব সমাজকে পুরোপলীয় ও নবোপলীয় এ দু’ভাগে ভাগ করা হয় ।
ঐতিহাসিক যুগ : কৃষি আবিষ্কারের পর মানুষ স্থায়ী বসতি স্থাপন করে এবং পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে তোলে সভ্যতা। সভ্যতার অপরূপ উপহার হচ্ছে লিখন কৌশল। ফলে এ সময় থেকে মানুষের ইতিহাস সম্পর্কে সঠিকভাবে জানা যায়। মেসোপটেমিয়া, মিসরীয়, গ্রিক, রোমান ইত্যাদি সভ্যতায় মানুষ লিখতে জানত এবং লিখিত তথ্য সংরক্ষণ করার কৌশল আয়ত্ত করেছিল। ঐতিহাসিকদের মতে, খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০০ অব্দে ঐতিহাসিক যুগের সূচনা হয় লিখন কৌশল pictogram বা চিত্রলিখনকে অবলম্বন করে। সভ্যতার উন্মেষ ও বিকাশের সাথে সাথে মানুষের ধ্যানধারণার পরিবর্তন আসে; কৃষিকাজ, বাগ-বাগিচা রচনা, জলসেচ, মৃৎপাত্র, যানবাহন, স্থাপত্যকলা, ভাস্কর্য, চিত্রশিল্প, শিক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা হতে থাকে । পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া যায় নীলনদ, দজলা-ফোরাত নদীর অববাহিকার। নদীর তীরগুলোতেই প্রথম সভ্যতার বিকাশ হয়েছিল। এসব সভ্যতার মাঝে রয়েছে মিসরীয়, সুমেরীয়, হিব্রু, গ্রিক, রোমীয় ইত্যাদি সভ্যতা।